পেয়ারা গাছ চাষপদ্ধতি:
চারদিকে ৬০ সেন্টিমিটার মাপে গর্ত করুন। রোপন থেকে দুরত্ব হতে পারে ৩-৬ মিটার × ৩-৬ মিটার ।
গর্তে সারের পরিমাণঃ
১৫ কেজি পচা গোবর/কম্পোস্ট, ২৫০ গ্রাম টিএসপি এবং ২৫০ গ্রাম পটাশ সার গর্তের মাটির সাথে মিশাতে হবে। এভাবে ১৫ দিন রেখে দিতে হবে।
গর্ত ভরাটঃ
সার প্রয়োগের পর গর্ত ভরাট করে ১৫ দিন রেখে দিতে হবে। চারা/কলম রোপণঃ মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস উপযুক্ত সময় হতে পারে।
পেয়ারা গাছ লাগানোর নিয়ম
মাটি নির্বাচন:
হালকা বেলে ও দো-আঁশ মাটিতে পেয়ারা ভালো হয়।
পেয়ারা গাছ বপনের সময়:
মে হতে সেপ্টেম্বর মাস কাজী পেয়ারার চারা বা কলম লাগানোর উপযোগী সময়। তবে পানি সেচের সুব্যবস্থা থাকলে সারাবছরই এই পেয়ারার চারা বা কলম ভালো রোপণ করা যায়।
পেয়ারা গাছের পরিচর্যা:
গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য জমি আগাছামুক্ত বা পরিষ্কারই রাখতে হবে।
পেয়ারা বা গয়া (বৈজ্ঞানিক নাম:Psidium guajava), এরাই Myrteae পরিবারের সদস্য।পেয়ারা একটি ফাইবার জাতীয় ফল তাই এটি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় আর তাই কারো ঠিকমত পায়খানা না হলে পেয়ারা খেয়েই করতে পারেন আপনি আপনার সমস্যার সমাধান। পেয়ারাতে ভিটামিন এ আছে যার কারণে এটি খেলে আমাদের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে থাকে । তাছাড়া এটি খেলে চোখের ছানি হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।
পেয়ারার পুষ্টি সম্পর্কিত তথ্য
পেয়ারা একটি পুষ্টিকর পাঞ্চ প্যাক, যা তাদের জনপ্রিয়তা ব্যাখ্যা করে থাকে । একটি পেয়ারায় সুপারিশকৃত দৈনিক খাওয়ার 250% এর বেশি ভিটামিন সি পাওয়া যায় । তা ছাড়াও, পেয়ারার জন্য একটি ভাল উৎস:
- ভিটামিন ‘এ’,
- পটাসিয়াম,
- লোহা,
- ক্যালসিয়াম,
- তন্তু,
একটি পেয়ারায় পাওয়া কিছু মূল পুষ্টিগুলো হলো :
- ক্যালোরি: 37,
- ফ্যাট: 0.5 গ্রাম,
- সোডিয়াম: 1 মিলিগ্রাম,
- কার্বোহাইড্রেট: 8 গ্রাম,
- ফাইবার: 3 গ্রাম,
- চিনি: 5 গ্রাম,
- প্রোটিন: 1 গ্রাম,
পেয়ারা প্রতিদিন সুপারিশকৃত 4-5টি ফলের একটি হিসাবে গণনা করা হয় । তবে এতে প্রাকৃতিক চিনি থাকে, তাই অতিরিক্ত না খাওয়াই গুরুত্বপূর্ণ। পরিমিত পরিমাণে পেয়ারা খাওয়ার ফলে আপনার দেহের ওজন বৃদ্ধি বা চিনি সংক্রান্ত অন্যান্য ক্ষতি ছাড়াই এর স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারবেন।
পেয়ারার প্রকারভেদ
অনেক সুস্বাদু পেয়ারার জাত ভারতে বিদ্যমান, তাদের ত্বকের রঙ/ সজ্জা বা উৎপত্তিস্থলের জন্য নামকরণ করা হয়ে থাকে । কিছু জনপ্রিয় পেয়ারার ধরন নিচে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে-
- এলাহাবাদ সফেদা,
- সর্দার ,
- পান্ত প্রভাত,
- ললিত,
- ধরিদার,
- চিত্তিদার,
- অর্ক মৃদুলা,
জুস, পাল্প এবং পিউরির জন্য, নির্মাতারা প্রাকৃতিকভাবে মিষ্টি সাদা এবং গোলাপী পেয়ারা পছন্দ করে থাকে । উচ্চতর প্রাকৃতিক চিনিযুক্ত ভারতীয় পেয়ারার জাতগুলি পানীয়গুলিতে স্বাদ এবং মিষ্টি যোগ করে।
কাজী পেয়ারা জাত এর বৈশিষ্টঃ
- উচ্চ ফলনশীল জাত।
- গাছ খর্বাকৃতির, মোটামুটি খাড়া ও মধ্যম ঝোপালো।
- বছরে দু’বার ফল দেয়।
- প্রধান মৌসুমে মার্চ-এপ্রিল মাসে গাছে ফুল আসে এবং আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে ফল আহরণ উপযোগী হয়ে থাকে।
- ফল উপবৃত্তাকার, বোটার দিকে সামান্য সরু, গড় ওজন ৪৪৫ গ্রাম।
- পরিপক্ক ফলের রং হালকা।
পেয়ারার ফুল আসার সময়
চারার গোড়ার মাটি হালকাভাবে চাপ দিয়ে শক্ত করে দিতে হবে। বীজের পরিমানঃ জাত ভেদে চারা কলমের পরিমাণ হেক্টরে ৩০০-৬২৫টি। সারব্যবস্থাপনাঃ প্রতিবছর ফাল্গুন/ফেব্রুয়ারী মাসে ফুল আসার সময়ে, বৈশাখের শেষে ফল ধরার সময়, মে মাসে এবং ভাদ্র শেষে/ সেপ্টেম্বর মাসে ফল তোলার পর তিন কিস্তিতে সার প্রয়োগ করুন।
পেয়ারা গাছের কীটনাশক
পেয়ারার পুষ্টিগুণ
পেয়ারার বৈশিষ্ট্য
পেয়ারা গাছের বৈশিষ্ট্য
পেয়ারার অপকারিতা
পেয়ারা পাতার উপকারিতা
পেয়ারা পাতা ফলের মতোই দুর্দান্ত, যা পুষ্টির পাওয়ার হাউস এবং ব্যাপক জনপ্রিয়ও। ফলের মতো পাতায়ও ভিটামিন বি এবং সি রয়েছে, যা চুলের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় কোলাজেন বাড়াতে সাহায্য করে। পেয়ারা পাতার উপকারিতা অনেক। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা মাথার ত্বক স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করে।
ভিটামিন সি চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে কোলাজেন উন্নত করে। লাইকোপিন উপাদান সূর্যের UV রশ্মি থেকে সুরক্ষা দেয়। পেয়ারা পাতা হলো ভিটামিন সি-এর মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং কোয়ারসেটিনের মতো ফ্ল্যাভোনয়েডের একটি পাওয়ার হাউস যা আমাদের স্বাস্থ্য এবং সৌন্দর্যের জন্য বিভিন্ন উপকার নিয়ে আসে।
পেয়ারা পাতার বৈশিষ্ট্য
এটিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর পাশাপাশি এই পাতায় পলিফেনল, ক্যারোটিনয়েড, ফ্ল্যাভোনয়েড এবং ট্যানিন রাসায়নিক পাওয়া যায়, যা বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকরী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পেয়ারার ফলের পাশাপাশি এর বীজ, খোসা ও পাতা সবই স্বাস্থ্যগুণে ভরপুর।
পেয়ারার জাতের নাম
উন্নত জাতঃ বারি পেয়ারা-১, বারি পেয়ারা-২, বারি পেয়ারা-৩, বাউ পেয়ারা-১, বাউ পেয়ারা-২, বাউ পেয়ারা-৩, বাউ পেয়ারা-৪, বাউ পেয়ারা-৫, বাউ পেয়ারা-৬, বাউ পেয়ারা-৭, বাউ পেয়ারা-৮ এবং স্বরূপ কাঠি ইত্যাদি উচ্চফলনশীল জাত সারাবছর চাষ করা যায়।
ফল অকালে ঝরে পড়া রোধ করে কোনটি
অক্সিন উদ্ভিদের অপরিণত অঙ্গের (পাতা, মুকুল, ফুল, ফল ইত্যাদি) অকাল পতন রোধ করে ।
ফল অকালে ঝরে পড়ে কেন
বোরনের অভাবজনিত লক্ষণসমূহঃবোরন সারের অভাবে গাছের বৃদ্ধি কমে যায় এবং গাছে ফুল সংখ্যায় কম আসে। বোরনের অভাবে সবজি বা ফল গাছের ফুল ঝরা বেড়ে যায়। ফল আকারে ছোট হয় এবং ফেটে যায়। এছাড়াও ফলের ( পেঁপে, কাঁঠাল, পেয়ারা ) আকার বিকৃত হয়ে অপরিপক্ক অবস্থায় ফল ঝরে যায়।
থাই পেয়ারা চারার দাম
থাই পেয়ারা কলম চারা। জাতঃ থাই ৫, ৭। দামঃ ৫০ টাকা পিস
থাই পেয়ারা গাছ চাষ পদ্ধতি :
অন্যান্য জাতের পেয়ারার মতোই মধ্য জ্যৈষ্ঠ থেকে মধ্য আশ্বিন মাসে থাই পেয়ারা-৭ এর চারা রোপণ করলে ভালো হয় । এ পেয়ারা চাষের জন্য নিকাশযুক্ত বেলে দো-অাঁশ মাটিই উত্তম। এ পেয়ারার বংশবৃদ্ধির জন্য বীজ থেকে চারা বা গুটি কলম ব্যবহার করা উচিত। চার বাই চার বা তিন বাই তিন মিটার দূরত্বে এ জাতের পেয়ারার চারা রোপণ করা
টবে পেয়ারা গাছের পরিচর্যা
টবে পেয়ারা চাষ করতে হলে শুরুতে যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে, তা হলো সর্বনিম্ন টবের আকার ১৮ থেকে ২০ ইঞ্চি হতে হবে। এছাড়া ড্রাম বা টবের আকার যত বড় হবে ততই ভালো।
পেয়ারা গাছের জন্য টবের মাটি তৈরি করতে হলে খেয়াল রাখতে হবে যে এর মাঝে প্রয়োজন মতো সবগুলো পুষ্টি উপাদান যেন মাটির মাঝে থাকতে হবে। ১এই জায়গায় ৮ ইঞ্চির একটি টবের জন্য সারের মাত্রা উল্লেখ করা হলো।
মাটি তৈরি করতে প্রথমে দুই ভাগ মাটি ও এক ভাগ গোবর সঠিকভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর এই মিশ্রণের সাথে ১৩০ গ্রাম টিএসপি ও ৭০ গ্ৰাম এমপি সার মিশিয়ে নিতে হবে। এছাড়া টবের গোড়ায় ফুটো থাকা খুবই আবশ্যক।
পেয়ারা গাছ রোপণ করলে সঠিকভাবে এর সেচের ব্যবস্থা করে নিতে হবে। অতিরিক্ত বেশি পানি পেয়ারা গাছের জন্য ক্ষতিকর। এজন্য পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকবে হবে। এছাড়া পরিচর্চার অন্যান্য কাজের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় ডালপালা ছাঁটাই করা একটি প্রধান কাজ হিসেবে ধরা হয় । সাধারণত পেয়ারা গাছের পুরোনো ডালে কোনো ফল আসে না। অপেক্ষাকৃত নতুন ডালে ভালো ফলন হয়।
পেয়ারা গাছে সাধারণত বছরে তিনবার ফুল আসতে দেখা যায়। এ কারণে ফাল্গুন-আষাঢ় ও কার্তিক মাসে কাছে আলাদা কিছু সার প্রয়োগ করতে হবে । গোবর ৫ কেজি, ইউরিয়া ৮০ গ্ৰাম, ফসফরাস ১৫০ গ্ৰাম এবং পটাশ ১০০ গ্ৰাম পেয়ারা গাছের গোড়া থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে।
Leave a Reply