ডাবের পানিতে পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম আছে। এই উপাদানগুলো শরীরে উচ্চ রক্তচাপ, ইলেকট্রোলাইট, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। শরীরে এগুলোর কোনোটার পরিমাণ বেড়ে গেলে উচ্চ রক্তচাপ, ইলেকট্রোলাইট, ডায়াবেটিস ইত্যাদির ভারসাম্য বজায় নাও থাকতে পারে। আবার এটি রক্তচাপ কমিয়েও দিতে পারে।
অতিরিক্ত গরম, রোদের তাপ, কর্মব্যস্ততা, মানসিক চাপের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ত্বক ও চুলের ওপর।চেহারায় ফুটে ওঠে বয়সের ছাপ। এ অবস্থায় ডাবের পানি আপনাকে দেবে সতেজতা। কারণ, এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম, ক্লোরাইড ও পটাশিয়াম, যা শরীরের পানিশূন্যতা দূর করে ক্লান্তি মুছে চেহারায় ফিরিয়ে আনে উজ্জ্বলতার ভাব।
ডাব বা নারিকেল একটি সুপরিচিত প্রাকৃতিক উপাদান। গরমের দিনের পিপাসা মেটাতে ডাবের পানি খাওয়ার খাবার তুলনা হয়না ।আসলে আমরা ত্বকের যত্নে ন্যাচারালে প্রাকৃতিক উপাদানই বেশি প্রধানত দেই বা ভরসা রাখি। তার মধ্যে একটি হলো ডাবের পানি বা নারিকেলের পানি। যা আমাদের ত্বকের উজ্জলতা বাড়াতে ভূমিকা রাখে।
ডাব বা নারিকেল বারোমাসি পাওয়া যায়। তাই এটি আপনারা ত্বকের যত্নে অবশ্যই ব্যবহার করতে পারবেন । ডাবে পটাশিয়াম ছাড়াও ডাবের পানিতে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যামাইনো এসিড, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন সি, আয়রন ,ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাংগানিজ ও জিঙ্ক।
ডাবের পানি খাওয়ার উপকার যেমনি ত্বকের ব্যবহার করলেও ভালো ফল পাবেন। ডাবের পানিতে ব্রণ , দাগ ছোপ ,রোদে পোড়া ভাব, বলিরেখা দূর করে । ডাবের পানি ব্যবহারে আপনার ত্বক হবে উজ্জ্বল মসৃণ। নিচে ব্যবহার বিধি গুলো জেনে নিন।
ময়শ্চেরাইজার হিসেবে ডাবের পানির উপকারিতা
ডাবের পানি আপনার ত্বকের জন্য ভালো আপনার ত্বকের তৈলাক্ত ভাব কমিয়ে দিবে উজ্জল ময়েসচারাইজার ত্বক। আপনি পুরো শরীরের ত্বকের যত্নে ডাবের পানি ব্যবহার করতে পারেন।ত্বকের ইনফেকশন ও অন্যান্য সমস্যায় ডাবের পানির ব্যবহার বেশ প্রচলিত। ডাবের পানিতে আছে অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ।
তা ছাড়াও ডাবের পানিতে থাকে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন ‘সি’ স্কিনের সানবার্ন দূর করে এবং স্কিন টোন লাইট করে। ডাবের পানি স্কিন ক্লিনজার হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটি স্কিনকে হাইড্রেট করে এবং স্কিনের ময়লা দূর করতে সাহায্য করে। এটি সেনসিটিভ স্কিনের জন্য বেস্ট ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে থাকে ।
ত্বকের উজ্জ্বলতায় ডাবের পানির উপকারিতা
- তিন টেবিল চামচ ডাবের পানি ,2 টেবিল চামচ হলুদের গুড়া ,এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে ফেলুন।
- এরপরে মুখে লাগিয়ে নিন।
- বিশ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- আপনার ত্বকের শুষ্কতা দূর হবে।
- ডাবের পানিতে আয়রন থাকায় ত্বকের উজ্জলতা ধরে রাখতে সাহায্য করবে ।
ডাবের পানি মুখে দেওয়ার নিয়ম
ডাবের পানি দিয়ে মুখ ধোয়ার সময় চোখ বন্ধ করে মুখ ধুতে হবে, চোখ খোলা রাখা যাবে না। আর ডাবের পানিতে মুখ ধোয়ার পর মুখে হালকা আঠালো ভাব লাগে। এ জন্য মুখে ডাবের পানি দেওয়ার পাঁচ থেকে ১০ মিনিট পর স্বাভাবিক পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন ।তাহলে আপনার ত্বক উজ্জ্বল হবে ফর্সা দেখাবে।
ব্রণের সমস্যার সমাধানে ডাবের পানির উপকারিতা
ব্রণের মারাত্বক সমস্যা থাকলে অনেক সময় ত্বকে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। ডাবের পানিতে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও এন্টিইনফ্লেমেটোরি উপাদান ত্বকের ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে, প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। রোদে পোড়া ত্বককে ইংরেজিতে সানবার্ন স্কিন বলা হয়। ত্বকের এ সানবার্ন দূর করতে ডাবের পানি কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
- প্রতিদিন ডাবের পানি দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করার অভ্যাস করুন।
- ব্রণের সমস্যা সমাধান করে থাকে ।
- ২৫ গ্রাম হলুদের সাথে এক গ্লাস তাদের পানি ও চন্দন মিশিয়ে ফেসপ্যাক বানিয়ে ত্বকে লাগিয়ে নিন।
- ব্যবহারের পনেরো মিনিট পর সব ধুয়ে ফেলুন ফেলুন।
- সপ্তাহের ৩ দিন ব্যবহার করুন ।
রোদে পড়ার দাগ দূর করতে ডাবের পানির উপকারিতা
ডাবের পানিতে রয়েছে এসেনশিয়াল মিনারেল, ভিটামিন, সোডিয়াম ও পটাশিয়াম আরো কিছু। এছাড়া ও অ্যান্টি মাইক্রোভাল ও অ্যান্টি ফাংগাল প্রপার্টিসও রয়েছে, যা ব্রণের হাত থেকে ত্বককে বাঁচায় এবং দাগ-ছোপ হালকা করতে সাহায্য করে। ডাবের পানিতে থাকে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন ‘সি’, যা রোদে পোড়াভাব দূর করে। বলিরেখা হালকা করে।আপনার ত্বকের রোদে পোড়া দাগ থাকলে নিতে পারেন এই ফেস প্যাকটি নিতে পারেন।
- ত্বকের জন্য আপনাকে দুই টেবিল চামচ মুলতানি মাটি ,পরিমান মতো ডাবের পানি মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন।
- ১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- চিরতরে দূর হবে রোদে পোড়া ত্বক।
- আপনাকে ফিরিয়ে দিবে মসৃণ ও উজ্জ্বল ত্বক ।
চোখের নিচে কালো দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায় কি
ডাবের পানির জুড়ি নেই।চোখে নিচের কালো দাগ দূর করতে ডাবের পানি উপকার করে থাকে। আয়রনের অভাবে চোখে নিচের কালো দাগ পরে ।আর ডাবের পানিতে রয়েছে আয়রন।
- কাঠবাদাম ও ডাবের পানি পরিমাণ মতো এবং দুই টেবিল চামচ মধু আর ২ ফোটা লেবুর রসও মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন।
- তারপর মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- চোখের নিচের কালো দাগ থাকবে না আর ।
অনেক সময় চামড়ার ইনফেকশনের ভুগে থাকে অনেকে ।বিশেষ করে বর্ষার সময় চর্ম রোগের ডাবের পানি ব্যাবহারে ক্ষত,দাগ সব ইনফেকশন দূর করবে খুবই সহজেই। ডাবের পানি খাওয়ার পাশাপাশি গোলাপ জলের পানি মিশিয়ে নিতে পারেন ।এতে দ্রুত ইনফরমেশন দূর হবে ।আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরবে।
রূপচর্চায় ডাবের পানির উপকারিতা
ডাবের জল এবং শাঁস ত্বককে শুধু ভিতর থেকে নয় বাইরে থেকেও আর্দ্রতা বজায় রাখে। এতে ভিটামিন এ, সি, প্রোটিন, ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, সোডিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়ামের মতো উপাদান অনেক রয়েছে। নিয়ম করে এই দুই উপাদান রূপচর্চায় ব্যবহার করলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ত্বকের জেল্লা বেড়ে যাবে ।
ডাবের পানি দিয়ে মুখ ধোয়ার উপকারিতা কি
ডাবের জল দিয়ে মুখ ধোয়ার উপকারিতা , এর ফলে মুখের দাগ সহজেই পরিষ্কার হয় এবং মুখের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতাও বজায় রাখতে সক্ষম । আপনার মুখে প্রচুর ব্রণ থাকলেও, এই জল দিয়ে মুখ ধুলে ভাল ফল পাবেন । যাদের তৈলাক্ত ত্বক, তারা বিশেষ করে গরমে সময় নানা সমস্যায় ভোগেন।ডাবের পানি আপনার চিন্তা মুক্ত করবে ।
ডাবের পানি মুখে দিলে কি হয়
ডাবের জলে ভিটামিন সি, বি, কে, জিঙ্ক, আয়োডিন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি রয়েছে। এই উপাদানগুলো ত্বকের বার্ধক্য প্রতিরোধ বিশেষ ভাবে সাহায্য করে থাকবে । নিয়মিত ত্বকের উপর ডাবের জল ব্যবহার করলে মুখে বয়সের ছাপ পড়ে না এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়তে থাকবে ।
ডাবের পানি কখন খেতে হয়
সকালে ডাবের জল খেলে খালি পেটে খাওয়া অনেক জরুরি। ঘুম থেকে উঠে চায়ের কাপে চুমুক দেওয়ার আগেই খেয়ে নিতে হবে এই উপকারী ডাবের পানি। ডাবের জলে রয়েছে লরিক অ্যাসিড, যা নানা ধরনের রোগের সাথে আপনাকে লড়াই করার ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করবে।
ডাবের পানির উপকারিতা স্ক্রাবার হিসেবে
- একটি বাটিতে একটু চালের গুঁড়া নিয়ে এর মধ্যে আদা টেবিল চামচ মধু এবং ১ চা চামচ ডাবের পানি মিশিয়ে নিন।
- এটি পুরো মুখে ২ মিনিট ম্যাসাজ করে নিন।
- এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।
ডাবের পানির উপকারিতা টোনার হিসেবে
ডাবের পানি এক ধরণের ন্যাচারাল টোনার। এটি ত্বকের পোরস ছোট করে আনে, স্কিনকে ময়েশ্চারাইজ করে, স্কিনের পিএইচ ব্যালেন্স রাখতে সক্ষম ।
- একটি বাটিতে ২টেবিল চামচ ডাবের পানি এবং ১ টেবিল চামচ গোলাপ জল নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
- একটি কটন প্যাড টোনারে ভিজিয়ে নিয়ে পুরো মুখ মুছে নিন।
ডাবের পানির উপকারিতা মাস্ক হিসেবে
ত্বক সতেজ রাখতে ডাবের পানি সাহায্য করবে। ত্বকের লাইটেনিং মাস্ক তৈরির জন্য বাটিতে তিন টেবিল চামচ ডাবের পানি, এক টেবিল চামচ আটা এবং আধা টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে নিন । ১৫ মিনিট পর কিছুটা শুকিয়ে গেলে হালকা ম্যাসাজ করে মুখ ধুয়ে নিন।
Leave a Reply