Health

পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা(Benefits and harms of eating guava)

পেয়ারা বা গয়া (বৈজ্ঞানিক নাম:Psidium guajava), এরাই Myrteae পরিবারের সদস্য।পেয়ারা একটি ফাইবার জাতীয় ফল তাই এটি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় আর তাই কারো ঠিকমত পায়খানা না হলে পেয়ারা খেয়েই করতে পারেন আপনি আপনার সমস্যার সমাধান। পেয়ারাতে ভিটামিন এ আছে যার কারণে এটি খেলে আমাদের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে থাকে । তাছাড়া এটি খেলে চোখের ছানি হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।

পেয়ারার পুষ্টি সম্পর্কিত তথ্য

পেয়ারা একটি পুষ্টিকর পাঞ্চ প্যাক, যা তাদের জনপ্রিয়তা ব্যাখ্যা করে থাকে । একটি পেয়ারায় সুপারিশকৃত দৈনিক খাওয়ার 250% এর বেশি ভিটামিন সি পাওয়া যায় । তা ছাড়াও, পেয়ারার জন্য একটি ভাল উৎস:

  • ভিটামিন ‘এ’,
  • পটাসিয়াম,
  • লোহা,
  • ক্যালসিয়াম,
  • তন্তু,

একটি পেয়ারায় পাওয়া কিছু মূল পুষ্টিগুলো হলো :

  • ক্যালোরি: 37,
  • ফ্যাট: 0.5 গ্রাম,
  • সোডিয়াম: 1 মিলিগ্রাম,
  • কার্বোহাইড্রেট: 8 গ্রাম,
  • ফাইবার: 3 গ্রাম,
  • চিনি: 5 গ্রাম,
  • প্রোটিন: 1 গ্রাম,

পেয়ারা প্রতিদিন সুপারিশকৃত 4-5টি ফলের একটি হিসাবে গণনা করা হয় । তবে এতে প্রাকৃতিক চিনি থাকে, তাই অতিরিক্ত না খাওয়াই  গুরুত্বপূর্ণ। পরিমিত পরিমাণে পেয়ারা খাওয়ার ফলে আপনার দেহের ওজন বৃদ্ধি বা চিনি সংক্রান্ত অন্যান্য ক্ষতি ছাড়াই এর স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারবেন।

পেয়ারার প্রকারভেদ

অনেক সুস্বাদু পেয়ারার জাত ভারতে বিদ্যমান, তাদের ত্বকের রঙ/ সজ্জা বা উৎপত্তিস্থলের জন্য নামকরণ করা হয়ে থাকে । কিছু জনপ্রিয় পেয়ারার ধরন নিচে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে-

  • এলাহাবাদ সফেদা,
  • সর্দার ,
  • পান্ত প্রভাত,
  • ললিত,
  • ধরিদার,
  • চিত্তিদার,
  • অর্ক মৃদুলা,

জুস, পাল্প এবং পিউরির জন্য, নির্মাতারা প্রাকৃতিকভাবে মিষ্টি সাদা এবং গোলাপী পেয়ারা পছন্দ করে থাকে । উচ্চতর প্রাকৃতিক চিনিযুক্ত ভারতীয় পেয়ারার জাতগুলি পানীয়গুলিতে স্বাদ এবং মিষ্টি যোগ করে।

পেয়ারার জাতের নাম

উন্নত জাতঃ বারি পেয়ারা-১, বারি পেয়ারা-২, বারি পেয়ারা-৩, বাউ পেয়ারা-১, বাউ পেয়ারা-২, বাউ পেয়ারা-৩, বাউ পেয়ারা-৪, বাউ পেয়ারা-৫, বাউ পেয়ারা-৬, বাউ পেয়ারা-৭, বাউ পেয়ারা-৮ এবং স্বরূপ কাঠি ইত্যাদি উচ্চফলনশীল জাত সারাবছর চাষ করা যায়।

পেয়ারা খাওয়ার নিয়ম

পেয়ারা প্রোটিন, ফাইবার এবং ভিটামিন গ্রহণের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে । তাই চিনিযুক্ত পানীয় বা অন্যান্য খাবারের বদলে পেয়ারা পাতার চা এবং পেয়ারা খাওয়ার প্রতিদিন অভ্যাস করুন। এতে দ্রুত  শরীরের ওজন কমবে। পেয়ারায় ক্যালরি কম থাকে ঠিকই তবে এটি দীর্ঘ সময় পেট ভরিয়ে রাখতে সাহায্য করে ।

খালি পেটে পেয়ারা খাওয়ার কি উপকারিতা

সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে পেয়ারা পাতা চিবিয়ে খেলে অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় । জেনে নিন, খালি পেটে পেয়ারা পাতা চিবানোর উপকারিতা সম্পর্কে । সকালে খালি পেটে পেয়ারা পাতা চিবিয়ে খেলে হজমশক্তি ভালো হয় । এতে পেটের সমস্যা যেমন বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস, অ্যাসিডিটির সম্ভাবনা কমে

পাকা পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা কি

গবেষণায় দেখা গেছে, খাবারের আগে পাকা পেয়ারা খেলে তা রক্তচাপ কমাতে কাজ করে। এটি উচ্চ কোলেস্টেরল কমাতেও সাহায্য করে। পেয়ারা খেলে উপকারী কোলেস্টেরল বেড়ে যায় ৮ শতাংশ। এটি হার্টের স্বাস্থ্য ভালো।

পেয়ারা খাওয়ার সঠিক সময়

দুটি ভারী খাবারের মাঝখানে একটি ফল খাওয়া ভাল। সেইসময় পেয়ারা খান রোজ একটি করে। রাতে ফল খাওয়া এড়িয়ে চলুন, কারণ এর জেরে ঠান্ডা লেগে কাশি হতে পারে।

পেয়ারা খেলে কি গ্যাস হয়

অতিরিক্ত পরিমাণে পেয়ারা খেলে পেট ফাঁপা হতে পারে। আসলে এই ফলের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে চিনি থাকে, যা ফ্রুক্টোজ হিসেবে পরিচিত। ফ্রুকটোজ হজম ও শোষণ করতে সমস্যা হয়। এর ফলে পেটে ফোলাভাব এবং গ্যাস হতে পারে।

রাতে পেয়ারা খেলে কি কি হয়

ফাইবারে সমৃদ্ধ এই ফল ওজন কমাতে সাহায্য করে থাকে। তবে রাতে পেয়ারা  প্রতিদিন না খাওয়াই ভাল। পেয়ারায় ফাইবার থাকলেও কারও কারও এই ফল খেয়ে গ্যাস হতে পারে। পেয়ারা খেয়ে অনেকের পেটও ফাঁপা ধরে।

সকালে খালি পেটে পেয়ারা খেলে কি কি হয়

সকালে খালি পেটে পেয়ারা পাতা চিবিয়ে খেলে হজমশক্তি অনেক ভালো হয় । এতে পেটের সমস্যা যেমন বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস, অ্যাসিডিটির সম্ভাবনা অনেকটাকমে । তাই প্রতিদিন সকালে পেয়ারা পাতা চিবিয়ে খেতে হবে ।

পেয়ারা পাতার  খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি

রোগ প্রতিরোধে পেয়ারার নানা গুণ রয়েছে। পেয়ারার বীজে ওমেগা-৩ ,ওমেগা-৬ পলিআন-সেচুরেটেড ফ্যাটি এসিড ও আঁশ  দ্বারা  বিদ্যমান। পেয়ারা পাতার রস ক্যান্সার প্রতিরোধী এবং সংক্রমণ, প্রদাহ, ব্যথা জ্বর, বহুমূত্র, আমাশয় নানা ধরনের রোগে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

পেয়ারা পাতা খাওয়ার নিয়ম

পুষ্টিবিদরা বলছেন, পেয়ারা পাতার চা ভেষজ হিসেবে পরিচিত, যাতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস, ফ্ল্যাভোনয়েডস এবং কোয়েসার্টিকসহ নানা ঔষধি গুণ রয়েছে। তবে এই চা তৈরি করতে হবে ফুটিয়ে। অনেকক্ষণ ধরে ফুটিয়ে নিতে হবে পেয়ারা পাতার পানি। আর এতে চিনি না মেশাতে পারলেই সবচেয়ে ভালো হয়।

পেয়ারা পাতা খেলে কি সুগার কমে যায়

ডায়বেটিসে উপকার দেয়ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিনে বলা হয়েছে, পেয়ারার পাতায় অ্যান্টিডায়াবেটিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। পেয়ারার পাতায় উপস্থিত ফেনোলিক যৌগ শরীরে উৎপন্ন হওয়া অতিরিক্ত গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য এটি অত্যন্ত ভাল।

পেয়ারা পাতার রসের উপকারিতা

পেয়ারা পাতার চা নিয়মিত খেলে রক্তের বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে এবং ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়াতে কাজ করে। এতে রয়েছে পটাশিয়ামও। এই খনিজ ব্লাডপ্রেশার নিয়ন্ত্রণে রেখে হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক কাজকর্ম বজায় রাখে। তাই নিয়মিত পেয়ারা পাতার জুস কিংবা চা বানিয়ে খেতে পারেন

পেয়ারা পাতার অপকারিতা

পেয়ারা পাতার নির্যাস একজিমা হতে পারে। এই পাতা ত্বকের জ্বালাভাব সৃষ্টি করে। যদি আপনার একজিমা গুরুতর অবস্থায় থাকে তবে সাবধানতার সঙ্গে পেয়ারা পাতার নির্যাস ব্যবহার করুন। ডায়াবেটিস রোগীদের পেয়ারা খাওয়া এড়ানো উচিত।

পেয়ারা পাতা খাওয়ার উপকারিতা

প্রথমে কচি ৪-৫ টা পেয়ারা পাতা ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এই পাতাগুলোকে ব্যালেন্ডার করে একটি পেস্ট তৈরি করতে হবে। এরপর পেস্ট এর সাথে এক চামচ পরিমাণ কালিজিরা গুড়া মেসাতে হবে। রাতে খাবারের ৩০ মিনিট পর এই পেস্টটি খেতে হবে। এই ভাবে এক টানা ৭ থেকে ১০ দিন খেতে পারেন।শহর এখন কংক্রিটের জঙ্গল। এখানে গাছের দেখাটুকুও নেই। চারিদিকে কেবল বড় বড় অট্টালিকা। তবে আমাদের মধ্যে যাঁরা শহরতলি বা গ্রামে বড় হয়েছে, তাঁদের কাছে গাছগাছালির এক আলাদা মাহাত্ম রয়েছে। স্কুল শেষে বন্ধুদের সঙ্গে গেছো বাঁদরের মতো ফল পাড়ার দিনগুলি মনের ক্যানভাসে সারাজীবন অক্ষত রয়ে যাবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের হাতের কাছেই প্রকৃতি অনেক সমস্যার সমাধান দিয়ে রেখেছে। শুধু সঠিক জিনিসটাকে চিনে ফেলার দেরি। এই যেমন পেয়ারা পাতার কথাই ধরুন না। এই পাতাতেই এমন গুণ রয়েছে যা আপনাকে নানাভাবে উপকৃত করতে পারে।কিন্তু আমরা সে সবের খোঁজ রাখি কই! আর আমাদের এই অজ্ঞানতায় কারণে এমন এক ঔষধি ভেষজ অবহেলায় পড়ে থাকে।তবে এই ভুল আর নয়, বরং এখন থেকেই পেয়ারা পাতা ব্যবহার শুরু করুন। শহরতলি বা গ্রামে এখনও এই পাতা জোগার করা কোনও কঠিন কাজ নয়। আর শহুরে মানুষজন বাড়ির পাশে সরু একফালি জমিতেই লাগিয়ে ফেলুন পেয়ারা গাছ। কিছুদিন পরই তাতে গজিয়ে উঠবে পাতা ও ফল। এই দুইই আপনার স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখবে।

skincareheart

Recent Posts

খুব সহজে কেক তৈরির রেসিপি(Very easy cake recipe)

  খুব সহজে ১০ মিনিটে তৈরি কেক রেসিপি এটি বাচ্চাদের  টিফিনে এবং সন্ধ্যায় বাড়িতে খাওয়ার…

55 years ago

নতুনদের জন্য ঘরে তৈরি পিজ্জা রেসিপি(Homemade Pizza Recipes for Beginners)

এই সহজ পিজ্জা রেসিপিটি নতুনদের জন্য দুর্দান্ত এবং একটি নরম ঘরে তৈরি পিজ্জা ক্রাস্ট তৈরি…

55 years ago

ত্বকের যত্নে গ্রিন টি এর উপকারিতা(Benefits of green tea in skin care)

গ্রিন টি পান করা আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য ভাল তবে এটি আপনার মুখে প্রয়োগ করা…

55 years ago

গ্রিন টি এর স্বাস্থ্য উপকারিতা কি?(What are the health benefits of green tea?)

মানুষ বহু শতাব্দী ধরে  গ্রিন টি এর স্বাস্থ্য উপকারিতাকে স্বাগত জানিয়েছে। গবেষণায় দেখা যায় যে…

55 years ago

ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি(Dragon fruit cultivation method)

ড্রাগন ফলের উপকারিতা    ১.অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ২.ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায় ৩.ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় ৪.হজমে সাহায্য করে…

55 years ago

ড্রাগন ফলের উপকারিতা কি?(What Are The Benefits Of Dragon Fruit?)

ড্রাগন ফল, যা "সুপারফুড" হিসাবে বিবেচিত হয়, সম্ভাব্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যগুলির সাথে উচ্চ পুষ্টি…

55 years ago